আউটসোর্সিং আর আমি

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে কৌতুহলের বশেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করি ২০০৩ সালে, স্ক্রিপ্টল্যান্স ডট কমে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়তি মেনে তখনো চতুর্থ সেমিষ্টার শেষ করতে পারিনি। সাইবার ক্যাফেতে সময় দিতাম ২০০০/২০০১ থেকেই, ইন্টারনেট এর বিভিন্ন ভালো খারাপ দিকের সাথে পরিচিত হয়ে উঠছিলাম ধীরে ধীরে, ইমেইল, এমএসএন মেসেঞ্জার এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি ততদিনে। আর্থিক সমস্যাই ছিলো ইন্টারনেটে বেশী সময় দেয়ার প্রতিবন্ধক, আর তাই চিন্তা করলাম, ইন্টারনেটের খরচ যদি ইন্টারনেট থেকেই আনা যায়, তাহলেই তো সমস্যা মিটে গেল। সেই থেকে খুঁজছিলাম কি করা যায়। এক বন্ধু বলল স্ক্রিপ্টল্যান্সে চেষ্টা করতে, একটা অ্যাকাউন্ট ও খুলে ফেললাম মার্চের শেষ সপ্তাহে। যেসব কাজের বর্ণনা দেখলাম, মনে হল, অনেক কিছুই শেখার বাকী! তারপরও চিন্তা করলাম যা পারি, আর যা জানি, তাই নিয়েই চেষ্টা করে দেখি!

সিএসই এর ছাত্র হিসেবে, কৌতুহল থেকেই উইন্ডোজ নিয়ে নাড়াচাড়া করতাম, উইন্ডোজ ৯৮ তখনও আমার ফেবারিট ছিলো, এক্সপিতেও কাজ করা শুরু করেছি, দুইবার নিজের পিসি নষ্ট হবার কারণে ট্রাবলশুটিং এর অভিজ্ঞতা বেশী হয়েছিল, আর টুকটাক ফটোশপে নিজের মতো আকাআকি করতাম। তো স্ক্রিপ্টল্যান্সে দেখলাম গ্রাফিক ডিজাইনের প্রচুর কাজ আছে। কোন কাজের মূল্য কি হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না, কিন্ত অন্যদের বিড দেখে আইডিয়া করে বিড করতাম। এখনকার মতো তখন ফ্রিল্যান্সিং এর জোয়ার ছিলো না এবং সে কারণে buyer আর freelancer এর অনুপাতও অনেক কম ছিল। প্রতিদিন বিড করতে থাকলাম ছোট ছোট গ্রাফিক ডিজাইন প্রোজেক্ট এ, ৭ দিনের মাথায় এপ্রিল এর ১ তারিখ সকালে পেয়ে গেলাম প্রখম প্রোজেক্ট। অন্য একটি প্রোজেক্টের জন্য 600×120 সাইজের ওয়েব ব্যানার দরকার ছিলো buyer এর। আর সাথে স্যাম্পলও দেয়া ছিলো যা দেখে বুঝলাম খুব সহজেই করা যাবে। আমি বিড করলাম অন্যদের বিড এর ভিত্তিতে আইডিয়া করে পার ব্যানার ৩ ডলার!

অবাক করে দিয়ে আমাকে ১০টি ব্যানার তৈরী করতে বললো পল আর পেমেন্ট কোথায় চায় জানাতে বলল, সেদি্ন সন্ধ্যাতেই ১০টি ব্যানার তৈরী করে দিয়ে ফ্রি হোস্টিং সাইটে আপলোড করে লিংক দিয়ে দিলাম ডাউনলোডের, তখন সে আমার জন্য তৈরী করলো আলাদা প্রোজেক্ট, সময় পার্থক্যের কারণে ৬ ঘন্টা পরে বিড করলাম ৩০ ডলার ১০টি ব্যানার এর জন্য, এর মাঝেই দেখি ১০-১৫ জন বিড করে ফেলেছে, যদিও প্রোজেক্ট টাইটেলে বলা ছিল এই প্রোজেক্ট আমার আইডি এর জন্য! কম্পিটিশন সম্পর্কে ধারণা হলো, প্রতিযোগিতার বাজারে সময়ের মূল্যও বুঝলাম তখন। যাহোক দুই ঘন্টা পরেই আমার বিড accept করলো পল আর পরের এক ঘন্টার মধ্যেই ৩০ ডলার পেমেন্ট ও পেয়ে গেলাম আমার স্ক্রিপ্টল্যান্স অ্যাকাউন্টে। বাসায় ফিরলাম অন্যরকম এক ভালোলাগা আর গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করার অনুভূতি নিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *