মনে পড়ে গেল ২

ছাত্র ছিলাম যখন, তখনও দেশে আজকালকার মত মোবাইল ইন্টারনেটের চল ছিলনা, ডায়াল আপের সুযোগ সীমিত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব আর সাইবার ক্যাফেই ছিল ভরসা। ২০০৩ সালের কথা, তখন সাইবার ক্যাফেতেও ছিলো স্পীডের হাহাকার, এখনকার মোবাইল ইন্টারনেট এর চেয়েও অন্তত: ৪/৫ গুন কম স্পীডেই ব্যবহার করতে হতো।

কাজের জন্যই অনেক সময় কাটাতাম সাইবার ক্যাফেতে, তো এমন একদিন ইলেকট্রিসিটি ক্রাইসিস এর কারণে গেলাম দূরের এক সাইবার ক্যাফেতে, যে পিসিতে বসলাম, এমনই কপাল খারাপ – স্পীড বলতে গেলে শূণ্যের কোটায়। আরো দুইটা পিসিতে তখন ইউজার ছিলো, আমি যখন কাউন্টারের লোকটাকে বললাম, সে বাকিদের জিজ্ঞেস করলো তাদের গুলোও স্লো কিনা, তারা দুজনেই কি মনে করে না বলল তখনও বুঝতে পারিনি; অন্য পিসিতে বসতে বলল, কিন্তু কেন জানি আমার হঠাৎ মনে হলো এখানে কোন কাহিনী আছে।

আরো কিছুক্ষণ দেখার নাম করে পিসিতে বসে খোঁজা শুরু করলাম, ল্যান এ দেখলাম আরো দুইটা পিসির সি ড্রাইভ শেয়ার দেয়া আছে, তারপর সেখানে ঢুকে একটু খোঁজ করতেই ছোট্ট একটা সফটওয়্যার পেলাম, কিন্তু হাতে সময় না থাকায় আর পয়সা নষ্ট না করে সফটওয়্যারটা নিজের সাইটে কোনরকমে আপলোড করে রেখে সেদিনের মত চলে আসলাম। বেচারা আমার কমপ্লেইনের কারণেই কিনা কিছু টাকা কম রেখেছিল।

পরে ভুলেই গিয়েছিলাম সফটওয়্যারটার কথা, পরের সপ্তাহে একদিন সকাল সকাল কি যেনো কাজে ঐ এলাকায় যেতে হওয়ায় কাজ শেষে সকালেই ১০টা নাগাদ আবার গেলাম সেই ক্যাফেতেই। ঢুকতেই মনে পড়লো সফটওয়্যারটির কথা। আজকে অন্য একটা পিসিতে বসলাম, যেটা ঐদিন নষ্ট ছিলো। আমিই ছিলাম সেদিনের প্রথম ইউজার, সুতরাং ঢুকে প্রথমে স্পীড দেখে একটু ভালোই লাগলো, সফটওয়্যারটা সম্পর্কে Google করে একটু জেনে নিলাম, তবুও মনে অবিশ্বাস ছিলো, কতটুকু কি কাজে আসবে।

একটু পরেই যখন আরো ইউজার আসা শুরু করলো, তখন দিলাম চালু করে, আর তখনই আবিষ্কার করলাম এর মাহাত্ম্য! ইন্টারনেটের স্পীড যেন কয়েকগুন বেড়ে গেল…একটা ২/৩ মেগা ডাউনলোড দিলাম, ৩/৪ মিনিটের মধ্যেই শেষ! একটু বিরতি দিলাম সফটওয়্যারটাকে, ততক্ষনে ক্যাফের সব পিসিই ইউজারদের দখলে। এবার শুরু করলাম আসল খেলা, আবার সফটওয়্যারটা চালু করে প্রায় ২০ মেগাবাইট সাইজের একটা সফটওয়্যার ডাউনলোড দিলাম, তারপর Freecell খেলা শুরু করলাম। আমার ডাউনলোড হচ্ছে প্রত্যাশাতীত দ্রুতগতিতে, আর একটু পরেই শুরু হলো কান্নাকাটি। প্রথমে একজন, তারপর দুজন করে ৪/৫ জন ইউজার বলতে শুরু করলো, কি ভাই নেট এত স্লো কেন!!! এরকম নেট থাকার চেয়ে না থাকা ভালো, দোকান বন্ধ করে বাসায় গিয়ে ঘুমান ইত্যাদি ইত্যাদি!! আমি তো এদিকে মনের আনন্দে ডাউনলোড করেই যাচ্ছি আর মনে মনে আগেরবারের ক্ষতি উশুল করছি। অবশেষে ২/৩ জন ইউজার নেট স্পীডে বিরক্ত হয়ে চলেই গেল আর আমি এদিকে ডাউনলোড করেই চলেছি। মনে আছে, সেদিন প্রায় ১০০ মেগা ডাউনলোড করেছিলাম আর ইন্টারনেট স্পীড এর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পেরে মনে মনে অনেক খুশি হয়েছিলাম, পরে আরো কয়েকটা ক্যাফেতেও সেই সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভালো ফল পেয়েছিলাম

পরে যা বুঝলাম, সফটওয়্যারটা আসলে সফটওয়্যার লেভেলে প্রসেসর ওভারক্লকিং করে পিসির প্রসেসিং স্পীড ইত্যাদি বাড়িয়ে দেয়, ফলে user experience একটু ভালো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *